শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন
কিন্তু রাজধানীর ডেমরায় এখনই শীতের আমেজ মেলায় পরিবারের লোকজনের জন্য বাক্সবন্দি করে রাখা লেপ-তোষক, কাঁথা ও কম্বলসহ শীতবস্ত্র বের করছেন গৃহিণীরা। অনেকেই পুরনো লেপ ঠিক করার জন্য বের করছেন। আবার অনেকেই নতুন করে লেপ তৈরি করতে দিচ্ছেন। আর মানুষের শরীরের কাপড়ে পরিবর্তন আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন লেপ-তোষকের কারিগররা। ডেমরা সদর কিংবা গ্রামের বিভিন্ন এলাকার অলিগলি ঘুরে ঘুরেও ধুনকররা তৈরি করেছেন লেপ-তোষক।
ডেমরার অঞ্চলের হাট-বাজার থেকে শুরু করে অলি-গলির বিভিন্ন দোকানে লেপ -তোষক, বালিশ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। শীতের আগমনের পূর্বেই বিক্রির উদ্দেশ্যে লেপ-তোষক, বালিশসহ বিভিন্ন শীত নিবারণের পোশাক মজুদ করে রেখেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, নভেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহ থেকেই শীত নামতে শুরু করেছে। তাই আগাম শীতের কারণে লেপ-তোষক বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় বেজায় খুশি লেপ-তোষক ব্যবসায়ীরা। লেপ-তোষক তৈরির জন্য অগ্রিম বায়না নিচ্ছেন কোন কোন কারিগররা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ডেমরা থানার সারুলিয়া বাজার, ডগাড় বাজার, কোনাপাড়া বাজার, ডেমরা বাজার, বাঁশেরপুল বাজার, বামৈল বাজার ও স্টাফ কোয়ার্ট সহ বিভিন্ন বাজারে লেপ-তোষক তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
এ সময় ডেমরা বাজারের সম্রাট বেডিং স্টোরের মালিক সম্রাট জানান, শীতের আগমনের পূর্বেই মানুষে নিজ নিজ পরিবারের সদস্যের জন্য লেপ, তোষক, বালিশ শীতবস্ত্র সংগ্রহে বিভিন্ন দোকানে দৌড় ঝাঁপ শুরু করছেন।
এদিকে ক’দিন থেকে পাখিডাকা ভোরেই তুলা, কাপড় ও ধুনার নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন ধুনকররা। কেউ বাইসাইকেলে, কেউ বা ব্যাটারিচালিত ভ্যানে আবার কেউ হেঁটে ঘুরছেন পাড়ায় পাড়ায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাড়িতে-বাড়িতে গিয়ে লেপ বা তোষক তৈরি করছেন। আবার অর্ডার নিচ্ছেন পরের দিনের জন্য। ধুনকরের টুং-টাং আওয়াজ আর বাতাসে উড়ে বেড়ানো তুলা জানিয়ে দিচ্ছে শীত আসছে।
এছাড়া ও ডেমরার বিভিন্ন হাট-বাজারে লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোতেও অতিরিক্ত কারিগর কাজ শুরু করে দিয়েছেন এরই মধ্যে। পাড়া-মহল্লার পাশাপাশি দোকানেও কাজ চলছে পুরোদমে। এখন তাদের ব্যস্ততার শেষ নেই।
সারুলিয়ার পুরনো ধুনকর মানিক বাবু জানান, গেলো এক সপ্তাহ আগেও তেমন কাজ-কর্ম ছিল না। কিন্তু কয়েকদিন থেকে প্রচুর শীত পড়েছে। ভোরে কুয়াশা থাকছে, সন্ধ্যার পর বইছে ঠাণ্ডা বাতাস। এতেই লেপ তৈরির অর্ডার দেওয়া-নেওয়া শুরু হয়ে গেছে।
বর্তমানে পুরনো লেপ নতুনভাবে তৈরির অর্ডারই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। গার্মেন্টসের তুলা দিয়ে তৈরি করা লেপও বিক্রি হচ্ছে। যার বিক্রয়মূল্য সিঙ্গেল ৭শ টাকা। আর ডাবল লেপ ১ হাজার ২৫০ টাকা। এছাড়া ভালো শিমুল তুলা দিয়ে নতুনভাবে একটি সিঙ্গেল লেপ তৈরি করতে এখন খরচ পড়ছে ১ হাজার ৫শ টাকা, আর ডাবল লেপ তৈরিতে খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৮শথেকে ২ হাজার ২শ টাকা। এছাড়া সিঙ্গেল তোষক ৭শ টাকা এবং ডাবল ১ হাজার ৫শ টাকা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে।
ডেমরার বাঁশেরপুল এলাকার এমজি কিবরিয়া বলেন, একটি লেপ তৈরিতে একজন কারিগরের সময় লাগছে এক থেকে দুই ঘণ্টা। এভাবে একজন কারিগর দিনে গড়ে ৫ থেকে ৬টি লেপ তৈরি করতে পারছেন।দিনে ৫ থেকে ৬টি তোষক তৈরি করতেও প্রায় একই সময় লাগছে। তুলা ও কাপড়ের দাম বাড়ায় গত বছরের তুলনায় এবার লেপ-তোষকে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি লাগছে। এছাড়া কারিগরদের মজুরিও বেড়েছে। সবমিলিয়ে লেপ-তোষক তৈরিতে কয়েকদিন থেকে ব্যস্ততা বেড়েছে বলেও জানান এই কারিগর।
ডেমরার কোনাপাড়ার লেপ-তোষক ব্যবসায়ী আজিজ মিয়া জানান, একটি লেপ, তোষক বানাতে গত বছরের চেয়ে এবার দুই তিনশ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে।
লেপ-তোষক ক্রেতা সানারপাড়ের আলম মিয়া বলেন, আর কয়েকদিন পরেই শীতের প্রকোপ বেড়ে যাবে। লেপ-তোষক তৈরির কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পাবে, তাই অগ্রিম টাকা দিয়ে লেপ-তোশক ক্রয়ে বায়না করেছেন বলে জানান তিনি।